বাংলার পত্র ঃ
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভুয়া পরিচয়ে আইডি খোলে সাথে নিজেকে নানান মিথ্যায় সাজিয়ে সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান, বিশেষ করে প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের টার্গেট করে বন্ধুত্ব করতেন এক রমণী। কৌশলে দ্রুততম সময়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তির সাথে অনলাইনে পরিচয়, বন্ধুত্ব এবং ঘনিষ্ঠভাবে নিজেকে জড়িয়ে নিতো। বিশেষ করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে যে কাউকেই খুব সহজে শিকারে পরিণত করতেন সেই রমণী। এরপর ভিডিও কলের রঙিন নেশায় নিয়মিত সংযুক্ত হতো শিকারের সাথে। সুকৌশলে সেসব পুরুষের একান্ত মুহূর্তের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হতো৷ এরপর সেসব একান্ত ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে তাদেরকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। এভাবেই একের পর শিকার ধরে নিজের স্বার্থ হাসিল করে যাচ্ছিল অনামিকা খানম চব্বিশ বছরের এক তরুণী।
তবে শেষ রক্ষা হলো না অনামিকার। এক মহিলা ভুক্তভোগীর করা মামলার ভিত্তিতে তাকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি সাইবার ইন্টেলিজেন্স -এর বিশেষ একটি টিম। উদ্ধার করা হয় প্রতারণা এবং ব্ল্যাকমেইলিং এর কাজে ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোনে অসংখ্য লোকজনকে ব্ল্যাকমেইল করার তথ্য পাওয়া যায়। বিকাশ নগদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার আলামতও পাওয়া যায়। সিআইডি সাইবার ইন্টেলিসেন্স টিমের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত তরুণী বিভিন্ন প্রতারণাসহ সকল অপকর্মের কথা স্বীকার করেছে। মূলত নেশার টাকা যোগাড় করতেই এই অনৈতিক পথ বেছে নেয় বলে জানায় অনামিকা খানম।
সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টার সূত্রে জানাগেছে, গ্রেফতারকৃত তরুণী একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ অধ্যয়নরতা। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকেই সে বিভিন্ন নেশায় জড়িয়ে পড়ে। একসময় ড্যান্স ক্লাবের সদস্য ছিল, ডিজে পার্টিও করত। মূলত সম্পর্ক স্থাপন করে একান্ত মুহূর্তের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ধারণ করে অনামিকা।
এরপর একান্ত ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে তাদেরকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। অনামিকার ফাঁদে পড়া লোকদের কাছে বিরাট অংকের চাঁদা দাবি করে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে এসব অশ্লিল ছবি ভিডিও তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দিতে থাকে। বিগত কয়েক বছর যাবত অসংখ্য লোকজনের সাথে এসব অনৈতিক কাজ করে প্রচুর টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অসতর্কতা ও ভুলের কারণেই এই ধরনের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে৷ এই বিষয়ে সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের এএসপি মো.রেজাউল মাসুদ সবাইকে সতর্ক থাকার পরমর্শ দেন৷ তিনি জানান, পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে বাইরের চাকচিক্য এবং আকর্ষণীয় ফেসবুক আইডি রিকোয়েস্ট গ্রহণ না করাই স্রেয়। ফেসবুকসহ সকল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভিডিও কলের ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। অবৈধভাবে চাকরি, বদলি বা বিদেশ যাওয়ার জন্য কিংবা যেনতেনভাবে টাকার লেনদেন না করাই উচিত বলে মনে করেন এই চৌকস কর্মকর্তা৷