বাংলার পত্র ঃ
নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় সরকারি মহিলা কলেজের সামনে
ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে গার্মেন্টস কর্মকর্তা মো. জয়নুর রহমান জনি (২০) নিহতের
ঘটনায় জড়িত দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) দিবাগত
রাতে ফতুল্লা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে
গ্রেফতার করা হয়। এসময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত মোবাইল ফোন ও ধারালো
সুইচ গিয়ার উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো শরীয়তপুর জেলার সখিপুর এলাকার বাসিন্দা সালাউদ্দিনের ছেলে ও
বর্তমানে জামতলা ধোপাপট্টি রাজিবের বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিনতাইকারী চক্রের হোতা
সাগর ওরফে কুত্তা সাগর (২৩) ও নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি কাঠের মার্কেট এলাকার মৃত
মানু চানের ছেলে বর্তমানে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কাউটাইল আরব আল মামুন মিয়ার বাড়ির
ভাড়াটিয়া জয়চান ওরফে বিশাল (২৪)।
মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে
আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, গ্রেফতারকৃত
দুই ছিনতাইকারীদের মধ্যে সাগর ওরফে কুত্তা সাগর হলো ওই গ্রুপটির প্রধান বা মূল
হোতা। এই ছিনতাইকারী চক্রের ৭-৮ জন সদস্য রয়েছে। যার মধ্যে ২ জন নারী
ছিনতাইকারীও রয়েছে। এই চক্রের সদস্যরা যে যেখানেই ছিনতাই করতো সেখান থেকে
সাগর ওরফে কুত্তা সাগরকে ভাগ দিতো। তারা চাষাঢ়া মোড় ও এর আশেপাশের এলাকাসহ
ফতুল্লার বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই করতো। ওই ছিনতাইকারী চক্রের বাকি সদস্যদেরও
গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া রাতের বেলায় ছিনতাইরোধে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন
স্থানে পুলিশি চেকপোষ্টের মাধ্যমে তল্লাশী চালানো হবে। নগরবাসীকে এজন্য সহযোগিতা
করতে হবে। এর পাশাপাশি শহরে যেসব খাবারের দোকান গভীর রাত অবধি চালু থাকে
সেগুলো রাত ১১টার পরে বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত ২৯ অক্টোবর ভোর ৪টায় কুষ্টিয়ার জে.এস বাস যোগে
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া মোড়ে নেমে পায়ে হেঁটে চাষাঢ়া রেল ক্রসিং-এর দিকে যান
ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর ফেইম এ্যাপারেলস লিমিটেডের জুনিয়র কোয়ালিটি অফিসার
জনি। এসময় তাকে ছিনতাইকারী সাগর হাতে থাকা সুইচ গিয়ার ছুরি কোমড়ে ঠেক দিয়ে
জিম্মি করে। মোবাইল ও মানিব্যাগ না দেয়ায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান পায়ের হাটুর
উপরে একটু পিছনের দিকে আঘাত করে। এ সময় জনির হাতে কমদামী (itle) মোবাইল ফোন
ও মানিব্যাগ ছিনতাই করে পালিয়ে যান সাগর। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ভোরে জয়নুর
রহমান জনি (২২) মারা যায়। এ ব্যাপারে কমলাপুর রেলওয়ে থানায় নিহতের চাচাতো ভাই
মোশারফ মাহমুদ মনা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ
তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে সাগর ও বিশালকে গ্রেফতার করে। তাদেরকে
রেলওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এসপি আরও জানান, জয়নুর রহমান জনিকে একাই ছুরিকাঘাত করে সাগর ওরফে কুত্তা সাগর।
তাকে পাহারা দিয়ে ছিল জয়চান ওরফে বিশাল।
লিখিত বক্তব্যে আরো জানানো হয়, পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল এর নির্দেশক্রমে
মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের মধ্য থেকে আসামী শনাক্তসহ
গ্রেফতারের লক্ষ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মো. তরিকুল ইসলামের সার্বিক
সহযোগিতায় এবং জেলা গোয়েদা শাখার অফিসার ইনচার্জ আল মামুনের নেতৃত্বে এসআই
(নিঃ) তারিকুল ইসলাম, এসআই (নিঃ) আতিকুর রহমান ভূঁইয়া, এসআই (নিঃ) এএইচএম
কারুজ্জামান, এএসআই (নিঃ) সেলিম উদ্দিন, এএসআই (নিঃ) রঞ্জিত সরকার ও সঙ্গীয়
ফোর্সসহ নারায়ণগঞ্জ সদর ও ফতুল্লা থানা এলাকায় সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে তথ্য
প্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সাগর ও জয়চানকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার করার
সময় গ্রেফতারকৃত আসামীদের হেফাজত হতে ঘটনার সময় ব্যবহৃত সুইচ গিয়ার ও নিহতের
ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে তারা দীর্ঘদিন ধরে
শহরের চাষাঢ়া রেল স্টেশনসহ আশপাশের এলাকায় ছিনতাইর ঘটনা সংগঠিত করে আসছিল।