২০২২ সালে সংখ্যালঘুদের প্রায় ৯ হাজার একর ভূমি দখল করা হয়েছে : গোবিন্দ প্রমানিক

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার আমলেও প্রতিবছরেই হত্যা, হুমকি, দেশত্যাগে বাধ্যকরা, নির্যাতন নিপীড়ন, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ ভুমিদখলের মাত্রা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এসব ন্যক্কারজনক সহিংসতা নিয়ে সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষ ধিক্কার জানালেও সেই সমস্ত নির্যাতনকারী অপরাধীদের একজনকেও শাস্তি দেয় নাই কোন সরকার। যে কারণে প্রতিনিয়তই দেশে হিন্দুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে কমছে। ২০২২ সালে সংখ্যালঘু হত্যা নির্যাতনসহ প্রায় ৯ হাজার একর ভূমি দখল করেছে সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠি। জানিয়েছে হিন্দু মহাজোট। ৬ জানুয়ারি রাজধানীর ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি নসরুল হামিদ মিলনায়তনে লিখিত বক্তব্যে এসব জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট মহাসচিব অ্যাডঃ গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক।


লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এদেশের হিন্দু সম্প্রদায় কখনোই স্বাধীনতার স্বাদ লাভ করে নাই। স্বাধীনতার পরপরই ঐতিহ্যবাহী রমনা কালি মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে; যদিও তা এখন ভারতীয় অর্থে পূনঃ নির্মান হয়েছে। ১৯৭৪ সালে শত্রু সম্পত্তি অর্ডিন্যান্সকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি আইন নামে পাশ করে এদেশের ২৬ লক্ষ একর সম্পত্তি দখল করা হয়েছে। এর পর সংবিধান কেটে ছেঁটে সাম্প্রদায়িকীকরন করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত হিন্দু ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করলেও হিন্দু ধর্ম নিয়ে কটুক্তির অভিযোগে কাউকে শাস্তি বিধান করা হয় নাই। উপরন্তু ফেসবুক হ্যাক করে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে শতাধিক হিন্দু যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। শত শত ঘরবাড়ী পুড়িয়ে, মঠ মন্দির ধ্বংস করে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে প্রতিনিয়ত হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী ন্যক্কারজনক সহিংসতা নিয়ে সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষ ধিক্কার জানালেও সেই সমস্ত নির্যাতনকারী অপরাধীদের একজনকেও শাস্তি দেয় নাই কোন সরকার। যে কারণে প্রতিনিয়তই দেশে হিন্দুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে কমছে। সরকারী পরিসংখ্যানে ২০১৫ সালে হিন্দুর সংখ্যা ছিল ১০.৭% কিন্তু ২০২২ সালের পরিসংখ্যানে তা দাড়ায় ৭.৯%। যদিও হিন্দু সম্প্রদায় পরিসংখ্যান শুদ্ধ মনে করে না। হিন্দু সম্প্রদায় মনে করে বাংলাদেশে এখনো হিন্দু সংখ্যা ১৫% এর অধিক। সংখ্যালঘু নির্যাতন ও নিপিড়ন বন্ধে এবং সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে হিন্দু সম্প্রদায় দীর্ঘদিন যাবৎ জাতীয় সংসদে ৬০ টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পূনঃ প্রতিষ্ঠা এবং একটি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবী করেছে। উক্ত দাবী দাওয়া বাস্তবায়নের দাবীতে হিন্দু সম্প্রদায় সারা দেশে ব্যাপকভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। কিন্তু বেদনার বিষয় সরকার দাবী দুটির প্রতি কর্ণপাত করে নাই। যে কারনে দিন দিন হিন্দু সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
জানুয়ারী ২০২২ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ইং তারিখ পর্যন্ত গত এক বছরে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৫৪ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, হত্যার হুমকী ৮৪৯ জন, হত্যা চেষ্টা ৪২৪ জন, জখম ও আহত করা হয়েছে ৩৬০ জনকে, নিখোঁজ হয়েছে ৬২ জন, চাঁদাবাজী হয়েছে ২৭ কোটি ৪৬ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা, মোট ক্ষতি হয়েছে ২২০ কোটি ৮৯ লক্ষ ৬৫ হাজার ৭০০ টাকা । পরিবার ও মন্দির লুঠ হয়েছে ৩১৯ টি। বসতবাড়ীতে হামলার ঘটনা ঘটেছে ৮৯১টি অগ্নিসংযোগ হয়েছে ৫১৯টি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুর, ১৭৩টি। ভূমি দখল হয়েছে ৮,৯৯০ একর ৬৩ শতাংশ, যার মধ্যে, ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা, সাঁওতাল ও ত্রিপুরা পাহাড়ী আদিবাসীদের ৬৫৫০ একর এবং সমতলের হিন্দুদের ২৪৪০.৬৩ একর শতাংশ। ঘর বাড়ী দখল হয়েছে ৫৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৫০ টি মন্দিরের ভূমি দখল হয়েছে ৫১টির। দখলের তৎপরতা ৯৮৪ একর ১২ শতাংশ। বসত বাড়ী থেকে উচ্ছেদ ৫৭২ টি পরিবার, উচ্ছেদের চেষ্টা ৩৬৯৪ টি পরিবার, উচ্ছেদের হুমকী ৩৫,৮১৮টি পরিবার। দেশত্যাগের বাধ্যকরণ ৪৪৫টি পরিবার এর মধ্যে বম সম্প্রদায়ের ২০০ পরিবারকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। দেশত্যাগে হুমকীর শিকার ১৫১১৫টি পরিবার, নিরাপত্তাহীনতায় ১,৯৫,৯৯১ টি পরিবার। সংঘবদ্ধ হামলা ৯৫৩টি। মন্দিরে

এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডঃ দীনবন্ধু রায়, প্রেসিডিয়াম মেম্বার অভয় কুমার রায়, যুগ্ম মহাসচিব সুজন দে, সাংগঠণিক সম্পাদক সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক প্রদীপ চন্দ্র চন্দ, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক সুমন সরকার, দপ্তর সম্পাদক কল্যাণ মন্ডল, হিন্দু মহিলা মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট লাকী বাছাড়, হিন্দু স্বেচ্ছাসেবক মহাজোটের সভাপতি অ্যাডঃ গৌরাঙ্গ মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক তোলন চন্দ্র পাল, হিন্দু যুব মহাজোটের সভাপতি প্রদীপ শঙ্কর, নির্বাহী সভাপতি গৌতম সরকার অপু, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ান মৃণাল মধৃ, প্রধান সমন্বয়কারী প্রশান্ত হালদার, দপ্তর সম্পাদক রঞ্জন সরকার ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক গোপাল সরকার রোমেল, ছাত্র মহাজোটের সাংগঠণিক সম্পাদক মলয় কুমার রাহুল, সঞ্জিব বিশ্বাস পিন্টুলাল দাস, শ্রী কিশোর চন্দ্র দাস প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *